আমদানি নির্ভরতার কারণে হলুদ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে খাগড়াছড়ির কৃষকরা

আমদানি নির্ভরতার কারণে হলুদ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে খাগড়াছড়ির কৃষকরা

এম দুলাল আহাম্মদ,খাগড়াছড়ি:-
হলুদ,এখন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক হারে ব্যাবহৃত হচ্ছে।প্রাকৃতিক
এন্টিসেপ্টিকসহ বহু ঔষুধি গুন সম্পর্ন হলুদ একটি মসলা জাতীয় দ্রব্য।শতকের
পর শতক ধরে এই মসলা তার বিরোধী প্রদাহজনক বৈশিষ্ট্যের জন্য ঔষধি হিসেবে
ব্যবহৃত হয়ে আসছে।সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও অনেক চমকপ্রদ তথ্য বেড়িয়ে
এসেছে।এছাড়া রূপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদানের অন্যতম অনুষজ্ঞ এই হলুদ,দক্ষিণ
এশিয়ার রান্নায় বহুল সমাদৃত একটি উপাদান।আবার হলুদকে বিয়ের অন্যতম উপকরণ
হিসাবে ধরা হয়।সবকিছু মিলিয়ে ভোজন বিলাসিতায় নানাবিধ মসলার সমন্বয়ে
রন্ধনশৈলীর উপস্থাপনা হলুদ আমাদের অতি প্রয়োজনীয় অনুষজ্ঞের মধ্যে অন্যতম
একটি।

প্রয়োজনীয় এ অনুষজ্ঞটি উৎপাদনের জন্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা অন্যতম
এলাকা।পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান ও আবহাওয়া
বিবেচনায়,পাহাড়ি মাটি হলুদ চাষের উপযোগী হওয়ায় এ জেলায় প্রচুর পরিমানে
হলুদ উৎপাদিত হয়।পাহাড়ি টিলা ভূমি ছাড়াও পাহাড়ের সমতল অংশে হলুদ চাষ করেন
কৃষকরা।উৎপাদিত হলুদ চাষীদের কাছ থেকে কাঁচা অবস্থায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা
কিনে নিয়ে,সিদ্ধকরে রোধে শুকিয়ে,শুকনা হলুদে পরিনত করে স্থানীয় বাজারে
বিক্রি করেন।পাইকাররা কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করে।এ জেলায়
উৎপাদিত হলুদ,গুণগত মান স¤পূর্ণ,ভোক্তা পর্যায়ে পার্বত্য  চট্রগ্রামের
উৎপাদিত হলুদের কদরও রয়েছে বেশী।বিখ্যাত হলুদ দেশের চাহিদার বড় একটি অংশ
মিটিয়ে থাকে।এতদিন নামী-দামী কোম্পানী গুলো পার্বত্য চট্রগ্রাম থেকে হলুদ
সংগ্রহ করে,প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করে আসলেও এখন আর পার্বত্যাঞ্চল
থেকে হলুদ না কিনছেন না।বড় বড় ব্যবসায়ী/কোম্পানী আমদানি নির্ভবর হওয়ায়
পাহাড়ে উৎপাদিত হলুদের দাম কমে গেছে। ফলে,ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে
লোকসান গুনছেন কৃষকরা।প্রতি বছর ক্রমাগত লোকসানের কারণে হলুদের চাষে
আগ্রহ হরাচ্ছে কৃষক।অধিকাংশ কৃষকই হলুদের চাষ বন্ধ করে দিয়েছে।আজ থেকে
প্রায় ১০বছর আগে জেলার অন্যতম হলুদের বাজার গুইমারা,হাটবারদিন,হলুদ
চাষী,মৌসুমী ব্যবসায়ী এবং পায়কারী ব্যবসায়ীদের ভিড়ে হলুদ বাজার থাকতো
জমজমাট।বর্তমানে এমন দৃশ্য আর  চোখে পড়ে না।মঙ্গলবার সরজমিনে গুইমারা
বাজার পরিদর্শন করে দেখা যায়,প্রতি মন কাঁচা হলুদ সর্বোচ্চ ৬০০টাকা এবং
শুকনা৩৮০০থেকে সাড়ে ৪০০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বাজারে কাচাঁ হলুদ বিক্রি
করতে আসা কৃষকরা জানান,প্রতিবছর আশায় আশায় হলুদের আবাদ করছি,দাম কমে
যাওয়ায় লাভবান হতে পারছি না।প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুকনায় পরিনত করা মৌসুমী
ব্যবসায়ীরা জানান,বর্তমানে শুকনা বাজারের দাম অনুযায়ী তারা ও সুবিধা করতে
পারছেন না।

গুইমারা বাজারের হলুদ ব্যবসায়ী মেসার্স ইসমাইল ট্রেডার্সের মালিক মো:
ইসমাইল হোসেন দৈনিক আমার সংবাদকে জানান,২০১০ সালে গুইমারা বাজার
থেকে,প্রতি হাটবারদিন ১০-১৫গাড়ি শুকনা হলুদ জেলার বাহিরে রপ্তানি
হতো,র্বতমানে মাত্র ১-২ গাড়ি হলুদ ঢাকাসহ সমতল অঞ্চলে রপ্তানি
হচ্ছে।কৃষকরা,তাদের ন্যায্য মুল্য না পাওয়ার কারণে খাগড়াছড়ি পার্বত্য
জেলায় বিখ্যাত হলুদের চাষ কমে যাচ্ছে।নি¤œমানের হলুদ আমদানীকে দায়ী করে
তিনি বলেন,নি¤œমানের হলুদ আমদানীর কারণে আমাদের দেশের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা
মার খাচ্ছেন।কৃষকরা নিজেদের হলুদ উৎপাদন করে,তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে
পারছে না।অথচ ভারত এবং বার্মার তুলনায় পার্বত্য চট্রগ্রামে উৎপাদিত
হলুদের কোয়ালিট এবং গুণগত মান খুবই ভালো।দাম কমের কারণে হলুদ চাষ এখন
অলাভজনক ফসল  হওয়ায় কৃষকরা আগের মতো হলুদের আবাদ করছেন না।ফলে পার্বত্য
খাগড়াছড়িতে প্রতিবছর কমে যাচ্ছে হলুদের আবাদ।বেকার হচ্ছে এ খাতে
সংশ্লিষ্টরা।

একটি সুত্র থেকে জানাযায়,বর্তমান মৌসুমেও প্রতি মাসে প্রায় ৫০০-৬০০ টন
হলুদ  ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে।গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে
(জুলাই-জানুয়ারি) ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ১৩ হাজার টন হলুদ আমদানি
হয়েছে।আমদানি কারকদের মতে,বাড়তি চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন কম হওয়ায় ভারত
থেকে হলুদ আমদানি বাড়ানো হচ্ছে।

পর্যবেক্ষণ মহল মনে করেন,পার্বত্য চট্রগ্রামসহ দেশে উৎপাদিত হলুদ লাগানো
থেকে শুরুকরে শুকনায় পরিনত করে ভোক্তা পর্যায়ে বাজারজাত করা পর্যন্ত
দীর্ঘ পক্রিয়ার সাথে বহু লোকের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে,এটি বিবেচনায়
নিয়ে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে,ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে
হলুদের সত্যিকার চাহিদা নিরূপণ করে,উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজন।অপরদিকে
হলুদের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও কৃষক কেন
ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় তা,খুজে বের করা প্রয়োজন।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো.মর্তুজা আলী
জানান,পার্বত্যাঞ্চলের মাটি ও আবহওয়া হলুদসহ মসলা জাতীয় ফসল চাষের জন্য
খুবই উপযোগী।তাছাড়া এখানকার উৎপাদিত হলুদ গুনগত মান খুবই ভাল।স্থানীয়
কৃষকদের সহজ সর্তে ঋনের ব্যবস্থা করাসহ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হলুদকে
গুরুত্ব দিয়ে বাইরে থেকে হলুদ সরবরাহ কমিয়ে সঠিকভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা
করে দিতে পারলে দাম সংকট নিরসণ সম্ভব হবে এবং হলুদ চাষে আগ্রহ হবে কৃষক।

আপনি আরও পড়তে পারেন